মোঃ শফিকুল ইসলাম দুলাল,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের একজন বৃক্ষপ্রেমী এ্যাড. জাহিদ ইকবাল। নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত প্রাঙ্গন, রেল ষ্টেশন, রোড ডিভাইডারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাছের চারা বিতরণ ও বৃক্ষরোপন করে চলেছেন। প্রায় ২০ বছর যাবত নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন বনজ, ফলজ, ঔষুধি ও শোভাবর্ধন গাছের চারা বিতরণ এবং রোপন করছেন তিনি। পৌর শহরের আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা ও জেলা আইনজীবী সমিতির একজন সদস্য এ্যাড. জাহিদ ইকবাল।
জানা যায়, এই ২০ বছরে প্রায় ১৫ হাজারেও বেশি গাছের চারা বিলিয়েছেন তিনি। তার ব্যক্তিগত আয়ের একটি বড় অংশ তিনি এই কাজে ব্যয় করে চলেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে পৃথিবী তথা ঠাকুরগাঁও বাসীকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত করতে তার এমন উদ্যোগ বলে জানা যায়। পরিবেশ রক্ষায় তার এই কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষজন। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকারক প্রভাব মোকাবেলা করতে তার শরীর সুস্থ থাকা অবধি এ কাজ চালিয়ে যাবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। বৃক্ষ রোপনের ফলে সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও ভুমিকা রাখছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অনেকে।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এ্যাড. জীতেন চন্দ্র পাল বলেন, এ্যাড. জাহিদ ইকবালসহ আমরা একইসাথে আইনজীবী হিসেবে কাজ করছি দীর্ঘদিন থেকে। বৃক্ষের প্রতি তার ভালোবাসা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। বৃক্ষ নিয়ে তার চোখেমুখে উৎসাহ, সাফল্য ও উদ্দীপনার ছাপ লক্ষ্য করা যায়। বৃক্ষের প্রতি রয়েছে তার ভালোবাসার এক অনন্য সবুজ টান।
কোট চত্বরের সংবাদ বিতরণীর স্বত্তাধিকারী মো: বকুল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেখছি তিনি গাছ লাগিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও বিভিন্ন মানুষকে গাছের চারা উপহারও দেন। তিনি শুধু নিজেই লাগিয়েছেন, এমন নয়। প্রতিবেশী, সহকর্মী, পথচারী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষদের গাছ লাগাতে উৎসাহিত করেন তিনি।
গাছের চারা বিতরণ ও রোপনের বিষয়ে এ্যাড. জাহিদ ইকবালের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গাছ আমাদের পরম বন্ধু। আমরা যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করি, সেটি শোষন করতে গাছের ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না। এই সবুজই আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে। এই সবুজ শ্যামল বাংলায় বৃক্ষই আমাদের প্রাণভরে নি:শ্বাস নিতে সাহায্য করবে। এমন একটি পরিবেশ তৈরী করতে চাই যেখানে বৃক্ষ থাকবে, সবুজ থাকবে চারপাশ। পশুপাখির নিরাপদ আবাস হবে। তাদের কলকলানিতে ভরে উঠবে প্রকৃতি, আর প্রাণভোরে মানুষজন অক্সিজেন পাবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার জনসাধারণের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করছি। সময় পেলেই রাস্তার ডিভাইডার, আদালত্ব প্রাঙ্গন, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন স্থানে বিভিন্ন গাছের চারা রোপন করছি। বর্তমানে বিভিন্ন বনজ, ফলজ, ঔষুধী গাছের পাশাপাশি শোভাবর্ধন ও সুগন্ধী জাতীয় গাছের চারা লাগাচ্ছি। ফুল ফোটার পর যে স্থানে গাছগুলো রয়েছে সেখানে সুগন্ধি ছড়ালে সকলের অনেক ভাল লাগবে। এছাড়াও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে গাছ লাগানো সদকায়ে জারিয়া। এ গাছের ছায়া, ফল ও অন্যান্য উপকরণ মানুষের উপকারে আসলে সারাজীবন এর জন্য পুন্য পাওয়া যাবে। সর্বোপরি এ কাজকে ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে চাই।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ্যাড. জাহিদ ইকবালের এ কাজটি প্রশংশনীয়। আমরাও শুনেছি তিনি রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে গাছের চারা লাগান, বিতরণ করেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও গাছের চারা উপহার দেন। তার এ কর্মযজ্ঞ করতে কৃষি বিভাগের কোন তথ্য বা পরামর্শ লাগলে আমরা সেটা দিতে চাই। তিনি ব্যক্তিগতভাবে একাই এ কাজটি করে থাকলেও কোন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তার পাশে দাড়ালে তিনি আরও বিস্তৃত আকারে এ কাজটি সম্পাদন করতে পারবেন। তার প্রতি জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল।